রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ২৫ জুন ২০২২:
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) আজ শনিবার নানা আয়োজন অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উদযাপন করা হয়। এই উপলক্ষে এদিন সকাল ১০টা থেকে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনের উত্তর চত্বরে সংগীত বিভাগের উপস্থাপনায় পদ্মা সেতুর থিম সং ও শেখ রাসেল মডেল স্কুলের শিক্ষার্থীদের পরিচালনায় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। বেলা ১০:৩০ মিনিটে এক আনন্দ র্যালি রাবি ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে। শোভাযাত্রায় উপাচার্য প্রফেসর গোলাম সাব্বির সাত্তার, উপ-উপাচার্য প্রফেসর চৌধুরী মো. জাকারিয়া, উপ-উপাচার্য প্রফেসর মো. সুলতান-উল-ইসলাম, কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর (অব.) মো. অবায়দুর রহমান প্রামানিক, রেজিস্ট্রার প্রফেসর মো. আবদুস সালাম, প্রক্টর প্রফেসর মো. আসাবুল হক, ছাত্র উপদেষ্টা এম তারেক নূর, জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক প্রফেসর প্রদীপ কুমার পাণ্ডেসহ অনুষদ অধিকর্তা, ইনস্টিটিউট পরিচালক, বিভাগীয় সভাপতি, হল প্রাধ্যক্ষ, শিক্ষক সমিতির সভাপতি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের নেতৃবৃন্দ, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অংশগ্রহণ করে।
বেলা ১১টায় শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনের উত্তর চত্বরে ও ভবনের সভাকক্ষে বড় পর্দায় পদ্মা সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠান দেখানো হয়। এখানে অন্যদের মধ্যে উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এরপর সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন উপাচার্য প্রফেসর গোলাম সাব্বির সাত্তার এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন উপ-উপাচার্য প্রফেসর চৌধুরী মো. জাকারিয়া ও কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর (অব.) মো. অবায়দুর রহমান প্রামানিক। উপ-উপাচার্য প্রফেসর মো. সুলতান-উল-ইসলামের সভাপতিত্বে এই আলোচনায় ইতিহাস বিভাগের প্রফেসর মো. আবুল কাশেম, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অধিকর্তা অর্থনীতি বিভাগের প্রফেসর মো. ইলিয়াছ হোসেন, রাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর দুলাল চন্দ্র বিশ্বাস, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের আহŸায়ক প্রফেসর মো. খলিলুর রহমান খান পদ্মা সেতুর গুরুত্ব ও তাৎপর্য এবং জাতীয় উন্নয়নে এর প্রভাব নিয়ে আলোচনা করেন।
আলোচনায় তাঁরা বলেন, পদ্মা সেতু আমাদের সাহসী ও বিচক্ষণ নেতৃত্বের পরম্পরার এক অসামান্য উপাখ্যানের নাম। সকল প্রতিকূলতা জয় করে অমিত সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেয়ার এক সংগ্রামী ঐতিহ্যের প্রতিফলন পদ্মা সেতু। পদ্মা সেতু বাঙালির অর্থনৈতিক মুক্তির অবিচ্ছিন্ন সংগ্রামের আরেক নাম। যখন আমাদের অর্থনীতি ঘুরে দাড়াতে শুরু করেছে তখনই উন্নত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে পদ্মা সেতুর মতো বিশাল অঙ্কের বিনিয়োগসহ মেগা প্রকল্প নিজেদের অর্থে গড়ার এক সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাঙালি বীরের জাতি, পরাভব মানে না। পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে রাজধানীর সঙ্গে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চের একুশ জেলার নিরচ্ছিন্ন ও দ্রæত যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হলো। বিপুল সম্ভাবনাময় এই অঞ্চলের বহুমুখী উন্নয়নের এই সেতুর গুরুত্ব অপরিসীম। এই সেতু চালুর ফলে শিল্পায়ন ও পর্যটন ক্ষেত্রে এই অঞ্চলের সম্ভাবনার নতুন দ্বারা উন্মোচন হলো।
প্রসঙ্গক্রমে তাঁরা বলেন, দেশপ্রেমিক জনগণের আস্থা ও সমর্থনে পুষ্ট আজকের সরকারের দৃঢ় প্রত্যয়ে উন্নয়নের এ নতুন অধ্যায় উন্মোচিত হয়েছে। আগামী দিনেও মানুষের আশা আকাক্সক্ষা ও স্বপ্ন পূরণে এই সরকার কাজ করে যাবে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ক্ষুধা-দারিদ্রমুক্ত ও উন্নত সমৃদ্ধ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজীবন লালিত স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে এই সেতু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তাঁরা আরো বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক উন্নয়নের ইতিহাসে পদ্মা সেতু এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এর অর্থনৈতিক গুরুত্ব অপরিসীম। বাংলাদেশ উন্নত দেশে রূপান্তরিত হওয়ার ক্ষেত্রে ও জাতীয় একতা বৃদ্ধিতে এই সেতু মেলবন্ধন হিসেবে কাজ করবে বলেও তাঁরা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
উপাচার্য প্রফেসর গোলাম সাব্বির সাত্তার তাঁর বক্তব্যে বলেন, পদ্মা নদী অত্যন্ত খরস্রোতা। আমাজন নদীর পরেই এর খরস্রোতার মাত্রা। এতদিন আমরা পদ্মাকে কীর্তিনাশা বলে জেনে এসেছি। অথচ এই পদ্মাকে নিয়ে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক অবিষ্মরণীয় কীর্তির স্বাক্ষর রাখলেন। পদ্মা সেতু চালুর ফলে আমাদের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একুশ জেলার সাথে রাজধানীর সরাসরি যোগাযোগের সূত্রপাত হলো। শুধু যোগাযোগ নয় অর্থনীতির নানা ক্ষেত্রে এর ইতিবাচক প্রভাব হবে ব্যাপক ও সুদূরপ্রসারী। প্রসঙ্গক্রমে উপাচার্য বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কারো প্রতিপক্ষ নয়। আওয়ামী লীগ নিজেই একটি শক্তি, একটি প্রতিষ্ঠান যা বাংলাদেশের জন্ম দিয়েছে। আওয়ামী লীগ মানেই উন্নয়ন। জাতির যা কিছু উন্নয়ন, যা কিছু সমৃদ্ধি, যা কিছু কল্যাণ সবই হয়েছে আওয়ামী লীগের হাত ধরে। উপাচার্য আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু এনেছেন আমাদের স্বাধীনতা, তাঁর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা দিয়েছেন বাংলাশের উন্নয়ন। পদ্মা সেতু শুধু সেতুই নয়, একটি দৃঢ় প্রত্যয়ের নাম, যুগ যুগ ধরে পদ্মা সেতু একটি ‘টেক্সটবুক এক্সাম্পল’ হয়ে থাকবে। উপাচার্য রবীন্দ্রনাথকে উদ্ধৃত করে বলেন, বাঙালি জাতির আকাক্সক্ষার দরিদ্রতা আছে, যা পদ্মা সেতু ভেঙ্গে ফেলেছে। আর এই অসাধ্য সাধন করেছেন শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যেই উন্নত বিশ্বের কাতারে আসীন হবে বলেও উপাচার্য আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রফেসর মো. আবদুস সালাম আলোচনা অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।
এই উপলক্ষে এদিন সন্ধ্যা ৭টায় শহীদ সুখরঞ্জন সমাদ্দার ছাত্র-শিক্ষক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে গত তিন দিন ধরে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ভিন্ন ভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করে।
প্রফেসর প্রদীপ কুমার পাণ্ডে
প্রশাসক, জনসংযোগ দপ্তর